Posts

Showing posts from 2020

লাল সোনাইল, Java cassia, Cassia javanica

Image
আমাদের দেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠসুন্দর ফুলগাছের একটি লাল সোনাইল। এর ইংরেজি নাম Java cassia। বৈজ্ঞানিক নাম Cassia javanica। পরিবার Fabaceae। বাংলাদেশের চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রাম এবং সিলেটের পাহাড়ি বনে এর দেখা মিলবে। এ ছাড়া দক্ষিণ ও দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশেও একে দেখা যায়। রূপের ঐশ্বর্য আছে বলেই একে দেশবিদেশের বিভিন্ন উদ্যান, বাগান, উদ্ভিদউদ্যান ও রাস্তার পাশে লাগানো হয়ে থাকে।  অনেকে একে Pink shower-ও বলে থাকেন। সোনালু বা সোনাইল নামে আমাদের আরেকটি অনুপম সুন্দর ফুলগাছের নাম অনুসরণ করে এর নাম লাল সোনাইল রাখা হয়েছে। এতে কারও কারও আপত্তি রয়েছে যদিও। একে তো এর রঙ লাল নয়, আবার সোনাইল মানেই তো হলুদ বা সোনারঙ, অতএব গোলাপিরঙা এ ফুলের নামে কী করে সোনাইল বা লাল রঙটি যুক্ত করা যায়, তার চেষ্টাই ছিল এ ফুলের নামকরণের প্রধান ভিত্তি । এ প্রসঙ্গে বলে দেয়া ভাল যে, এমন অনেক গাছ রয়েছে যেগুলো আমাদের নিজস্ব অথচ স্থানীয় নাম না থাকায় পরিচিতি পেয়েছে বিদেশি বা ইংরেজি নামে। যেমন ধরা যাক 'নেপাল ট্রাম্পেট ভাইন' গাছটির কথায়। আজ পর্যন্ত এর মতো আরো কয়েকটি দেশি গাছের নিজস্ব নামকরণ আমরা করতে পারিনি। তাই ইংরে

তুরুতচণ্ডাল, Telegraph plant, Desmodium motorium

Image
তুরুতচণ্ডাল (ইংরেজি নাম  Telegraph plant, বৈজ্ঞানিক নাম Desmodium motorium , পরিবার  Fabaceae) গুল্মটি আমাদের অনেকের কাছে খুব একটা পরিচিত না হলেও বিজ্ঞানী ও ভিষকদের কাছে বেশ ভালভাবে পরিচিত। গাছটির আরেকটি উল্লেখযোগ্য তথ্য রয়েছে, যেটি জানতে পারলে আমাদের সবারই ভাল লাগবে, গর্ব অনুভব করব।  আমরা লজ্জাবতী উদ্ভিদটির সাথে কমবেশি সবাই পরিচিত। এর পাতা ছুঁলে সাথে সাথে তা গুটিয়ে যায়, কেমন যেন লজ্জিত হয়ে অবনত হয়ে পড়ে, যেটি কিনা উদ্ভিদজগতের স্থাণু বৈশিষ্ট্যটির সাথে মোটেই মেলানো যায় না। আমাদের তুরুতচণ্ডালেরও এরকম একটা বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এর পাতাগুলো, বিশেষ করে ছোট পাতাগুলো, যে-দুটি কিনা পত্রাক্ষের অগ্রভাগের পাতাটির চাইতে অনেক অনেক ছোট ও হালকা-পাতলা, নিজে থেকে সাড়া দিতে পারে। খালি চোখে গাছের নড়াচড়া দেখা যায়, পতঙ্গভুক কয়েকটি উদ্ভিদসহ উদ্ভিদজগতে মাত্র কয়েকটি নমুনাই রয়েছে। এ গুল্মটি আমাদের গর্বেরও কারণ। প্রখ্যাত বাঙালি বিজ্ঞানী জগদীশ চন্দ্র বসু এ-গাছের ওপর গবেষণা চালিয়ে প্রমাণ করেছিলেন যে, গাছেরও প্রাণ আছে। তুরুত চণ্ডালের নিজে থেকে সাড়া দেয়ার ব্যাপারটি নিশ্চয়ই তাঁকে এ-গাছটি বেছে নেয়ার ক্ষেত্রে উজ্জীবিত করেছে

কচু, Taro, Colocasia esculent

Image
কচু (ইংরেজি নাম Taro, বৈজ্ঞানিক নাম Colocasia esculenta , পরিবার   Araceae) বাংলাদেশের একেবারে পরিচিত উদ্ভিদের একটি। বহুবর্ষজীবীটি আমাদের জলাভূমি কিংবা এর আশপাশের ভেজা মাটিতে খুব জন্মাতে দেখা যায়। ঔষধিটির জন্মভূমি মূলত এশিয়ার গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চল হলেও পৃথিবীর অন্যান্য গ্রীষ্মমণ্ডলীয় এলাকায় বেশ অভিযোজিত। এমনভাবে অভিযোজিত যে, মনে হয় প্রাকৃতিকভাবেই সেখানেই এর জন্ম। কচু এশিয়ার চাষকৃত সবচেয়ে পুরনো ফসলের একটি। খাদ্যমান ও ঔষধি-গুণে কচু অন্যতম সেরা উদ্ভিদ। এর প্রায় সব অঙ্গপ্রত্যঙ্গই ভক্ষণযোগ্য। পাতা, কাণ্ড, পত্রবৃন্ত, রূপান্তরিত কাণ্ড (ছড়া/মুখী), ধাবক (লতি)—এ সবই সুস্বাদু সবজি হিসেবে আমরা বাঙালিসহ অনেক জাতি অহরহ খেয়ে থাকি।  বাংলাদেশ বা বৃহত্তর বাংলার অতি পরিচিত উদ্ভিদটির নামের কোনো শেষ নেই। এর মধ্যে কয়েকটি হল—মুখীকচু, গুঁড়াকচু, কুঁড়িকচু, ছড়াকচু, দুলিকচু, বিন্নিকচু। কচু পরিবারের প্রায় সবারই পাতার চমৎকারিত্ব রয়েছে। কচুরও তাই। পাতাগুলো বেশ বড় হয়। এগুলো মৃদু সবুজ, মসৃণ, অনেকটা ত্রিকোণাকার ও ডিম্বাকার, ৩০-৪০ মেমি লম্বা ও ২০-২৬ সেমি চওড়া। পাতার বৃন্ত বেশ লম্বা, মোটা ও পুরু—পুরো গাছের উচ্চতার সমান প্

উলু, Cogon grass, Imperata cylindrica

Image
উলু (ইংরেজি নাম: Cogon grass, বৈজ্ঞানিক নাম: Imperata cylindrica , পরিবার: Gramineae) বাংলাদেশের অন্যতম সুন্দর ফুলদায়ী একটি ঘাস। এটি ১ মিটারের বেশি উচ্চতা পায় না। এর কাণ্ড নলাকার, নিরেট এবং তা খসখসে। এর শিকড় আনুভূমিকভাবে মাটির নিচে বিছানো থাকে। ঔষধিটি (ওষুধসংক্রান্ত নয়, বরং উদ্ভিদতাত্ত্বিক পরিচয়) জলাভূমির আশেপাশে কিংবা সিক্ত মাটিতে জন্মাতে ভালবাসে। এটি দেশের প্রায় সবখানেই পাওয়া যায়। এর আদিনিবাস আমাদের ভারতীয় উপমহাদেশ।       অন্যান্য নাম : উলুঘাস, উলুখড়, লালং, শন, ছন, ছাউ, সারকান্দা। উলুর পাতা সবুজ, লম্বাটে, সাধারণত ঘাসের পাতা যেমনটি হয়ে থাকে। লম্বায় প্রায় ২০-৫০ সেমি, অগ্রভাগ চোখা।   ফুলগুলো গুচ্ছাকার, ধবধবে সাদা, রুপালি সাদাও বলা যায়। তবে বলে রাখা ভালো, ফুলের প্রাথমিক রঙটি কিন্তু বেগুনে সাদা, পরে তা শুভ্র রঙ ধারণ করে। ফুলের মৌসুম শুরু হয় গ্রীষ্মের শেষ থেকে। অনবরত ফুল ফোটায় শরৎকাল পর্যন্ত। এর ফুলের সৌন্দর্য়ের একমাত্র উপমা হতে পারে কাশফুল; যদিও আকার-আয়তনে এর চেয়ে যথেষ্ট বড়, যেমন গাছ, তেমনি এর ফুলের আকারও। ব্যাপারটা মজা করে বলা যায়, শরতে উলুঘাসের বিলয় ঘটার পর তারই শুভ্র আসনে বসে কা

ঈশ্বরমূল, Indian birthwort, Aristolochia indica

Image
ঈশ্বরমূল   (ইংরেজি : Indian birthwort, বৈজ্ঞানিক নাম  Aristolochia indica , পরিবার: Aristolochiaceae )  বহুবর্ষজীবী কাষ্ঠল লতা। এর শেকড়ও কাষ্ঠল। লতাটি নরম রোমযুক্ত আর গোড়া কাষ্ঠল হলেও বাকি শরীর নরম। রূপান্তরিত ডালগুলো পরস্পরকে পেঁচিয়ে হয় মাটিতে বিছিয়ে থাকে নাহয় কোনো কিছুকে অবলম্বন করে উপরে ওঠে। সাধারণত বাংলাদেশের পতিত জমি, রাস্তা বা খালের ধারে এর দেখা মিলবে। উদ্ভিদটির আদিনিবাস আমাদের ভারতীয় উপমহাদেশ। অন্যান্য নাম :  ঈশ্বের মূল, ঈশ্বের মূলী, ঈশের মূল; ঈশ্বরী, সুগন্ধা, রুদ্রজটা, রুদ্রলতা, পত্রবল্লী (সংস্কৃত)। ঈশ্বরমূলের পাতাগুলো একবার দেখেই চেনা যায়। পাতাগুলো বেহালার মতো দেখতে, বল্লমাকার, ২-৪ সেমি লম্বা আর ১-২ সেমি চওড়া, অগ্রভাগ কিছুটা বাঁকা ও সূঁচালো। ফুল ছোট হলেও আকারপ্রকারে অবাক-করা। নলাকার, লম্বা মুখ, রঙ সবজে সাদা, উপরের দিকটা বেশ প্লরম্বিত। সম্ভবত পোকামাড়কে পরাগায়ণে কাছে টানার এ কৌশল। পাতার কোণ থেকে ফুলগুলো গজায় বর্ষাকালে। ফুটতে থাকে প্রায় অক্টোবর পর্যন্ত।  ফলগুলো অনেকটাই এ-গণের হংসলতা’র মতো, ২.৫ মেমি লম্বা। বীজগুলো অনেকটা ত্রিকোণাকার, পক্ষল। ফলগুলো বিদারী, অর্থাৎ পাকলে বীজ উন্মুক্ত

অশোক, Saraca asoca, Caesalpiniaceae

Image
অশোক আমাদের দেশের অন্যতম সুন্দর ফুল অশোক। লাল, হলুদ কিংবা কমলা--উজ্জ্বল ও রঙিন আভায় চিত্রিত ফুল। শুধু রূপে নয়, গন্ধেও অশোক অনন্য। বলে রাখা ভালো, এটি আমাদের পাহাড়ি ফুল। এখনো বাংলাদেশের চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রামের বনে এ ফুলের অস্তিত্ব পাওয়া যাবে। পাহাড়ের খাদে, পাহাড়ের উপরে কিংবা প্রস্তরখণ্ডের আশপাশে একে দেখতে পাওয়া যাবে। বসন্তকালে পাহাড়ে গেলে যে-কেউই একে দেখতে পাবে। অশোকের ফুল যেমন রূপময় তেমনি এর প্রস্ফুটন-ঐশ্বর্য। ফুলের মৌসুমের একেবারে শুরুর দিকে সারা গাছের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে ফুল ফুটতে শুরু করে। এ জন্য খুব সহজেই ফুলে শোভিত গাছটি যে-কারোরই চোখে ধরা দেয়। অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ এ-কারণেই বলা হলো যে, শুধু ডালপালাতেই নয়, প্রধান কাণ্ড, এমনকি গাছের গুঁড়িতেও এর ফুল ফোটে। কিছু কিছু আবার অনেকটা মাটিলগ্ন অবস্থায়ও ফোটে। কিংবদন্তিতুল্য ভারতসম্রাট অশোক-এর নামে এর নাম। কথিত আছে, তিনি এ গাছের নিচে জন্মগ্রহণ করেছেন। অশোক কথাটার অর্থ আমরা সবাই জানি--শোক নাই যাতে, অর্থাৎ শোক বা দুঃখহারী। ঔষধি গুণ, পাতাবহুল্য, পাতার রাজসিক আবির্ভাব, নিবিড় ছায়াসুখ, ফুলের সৌন্দর্য আর মধুগন্ধিতার জন্য এর এমন নাম

আম, Mango, Mangifera indica

Image
আমফুলের কথা আমগাছের কথা মোহাম্মদ আলি শেখ সাদি ও তাঁর বন্ধু এক আমগাছতলায় বসে আছেন। পাকা আমের সময় তখন। গাছের নিচে অনেক পাকা আম পড়ে রয়েছে দেখে সাদি গপ-গপ করে তার কয়েকটি সাবাড় করলেন। এ দেখে তাঁর বন্ধু তাঁকে বেশ ভর্ৎসনা শুরু করল। সে বলল, যেই-না একটা ফল! এত মজা করে খাওয়ার কী আছে এতে? তাদের কথার কোন এক ফাঁকে এক গাধা গাছতলায় এসে হাজির। সে গাধা মাটিতে পড়ে থাকা পাকা আমগুলোতে মুখ দিয়ে নেড়েচেড়ে বিমুখ হয়ে ফিরে যেতেই আমবিদ্বেষী বন্ধুটি ঠাট্টা করার মোক্ষম সুযোগ পেয়ে বলল, দেখলে তো, গাধা পর্যন্ত আম খেতে চায় না। আর তুমি...। তার কথা শেষ না হতেই সাদি মন্তব্য ছুঁড়ে দিলেন, ঠিকই বলেছ, একমাত্র গাধারাই আম খেতে চায় না। সত্য কি মিথ্যা, জানা যায় না, তবে আম নিয়ে এরকম গালগপ্পো প্রচলিত আছে অনেক।  আমাদের দেশের দারুণ জনপ্রিয় একটি ফল আম। একে বলা হয় ‘ফলের রাজা’। আকার-প্রকার, রঙ, রস, স্বাদ, পুষ্টি—সবকিছু মিলিয়েই এই অভিধা এর। গাছটি বাংলাদেশের জাতীয় বৃক্ষ। তা হলেও এর ফুল যেন তেমন পাত্তার বিষয় নয় সাধারণের কাছে। বাঙালি কবিসাহিত্যিকরা অবশ্য এর ব্যতিক্রম। বাংলা-সাহিত্য তো বটেই, খোদ আমাদের জাতীয় সংগীতেই আমফুলের