কচু, Taro, Colocasia esculent
কচু (ইংরেজি নাম Taro, বৈজ্ঞানিক নাম Colocasia esculenta, পরিবার Araceae) বাংলাদেশের একেবারে পরিচিত উদ্ভিদের একটি। বহুবর্ষজীবীটি আমাদের জলাভূমি কিংবা এর আশপাশের ভেজা মাটিতে খুব জন্মাতে দেখা যায়। ঔষধিটির জন্মভূমি মূলত এশিয়ার গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চল হলেও পৃথিবীর অন্যান্য গ্রীষ্মমণ্ডলীয় এলাকায় বেশ অভিযোজিত। এমনভাবে অভিযোজিত যে, মনে হয় প্রাকৃতিকভাবেই সেখানেই এর জন্ম। কচু এশিয়ার চাষকৃত সবচেয়ে পুরনো ফসলের একটি। খাদ্যমান ও ঔষধি-গুণে কচু অন্যতম সেরা উদ্ভিদ। এর প্রায় সব অঙ্গপ্রত্যঙ্গই ভক্ষণযোগ্য। পাতা, কাণ্ড, পত্রবৃন্ত, রূপান্তরিত কাণ্ড (ছড়া/মুখী), ধাবক (লতি)—এ সবই সুস্বাদু সবজি হিসেবে আমরা বাঙালিসহ অনেক জাতি অহরহ খেয়ে থাকি।
বাংলাদেশ বা বৃহত্তর বাংলার অতি পরিচিত উদ্ভিদটির নামের কোনো শেষ নেই। এর মধ্যে কয়েকটি হল—মুখীকচু, গুঁড়াকচু, কুঁড়িকচু, ছড়াকচু, দুলিকচু, বিন্নিকচু।
কচু পরিবারের প্রায় সবারই পাতার চমৎকারিত্ব রয়েছে। কচুরও তাই। পাতাগুলো বেশ
বড় হয়। এগুলো মৃদু সবুজ, মসৃণ, অনেকটা ত্রিকোণাকার ও ডিম্বাকার, ৩০-৪০ মেমি লম্বা ও
২০-২৬ সেমি চওড়া। পাতার বৃন্ত বেশ লম্বা, মোটা ও পুরু—পুরো গাছের উচ্চতার সমান প্রায়।
নতুন পাতা জন্মায় মাটির নিচে থাকা রূপান্তরিত কাণ্ড থেকে।
কচুর ফুলকে বলা হয় স্প্যাডিক্স পুষ্পমঞ্জরী। বিশেষ ধরনের এ মঞ্জরীকে নিরাপত্তার চাদরে আবৃত রাখে বিশালাকার উপপত্র, যাকে বলে স্পেদ। সাধারণত হলুদ রঙের পুরু ও লম্বাটে পুষ্পমঞ্জরীটি গাঢ় হলুদ রঙের বিশালাকার উপপত্রের পাঁচ ভাগের তিন ভাগ দৈর্ঘ্য পায়। প্রাথমিকভাবে মঞ্জরীর পুরোটাই ঢেকে রাখে উপপত্র, পরে ধীরে ধীরে মঞ্জরী নিজের চরিত্রে প্রকটিত হয়। ফুল ফোটার মৌসুম বর্ষার শেষাশেষি।
ফলগুলো কচি অবস্থায় সবুজ, পাকলে উজ্জ্বল কমলাটে। উদ্ভিদবিদ্যায় এগুলোকে বলে
বেরি। অনেক বীজ থাকে এগুলোতে।
মাটির নিচে থাকা রূপান্তরিত কাণ্ডের একেকটি অংশকে আমরা বলে থাকি কচুর মুখী বা ছড়া। এগুলো গোলগাল বা লম্বাটে হয়। বাদামির দুটি আভায় এগুলো চিত্রিত। কচু বংশবৃদ্ধির কাজটি চালায় মাটিরে নিচে থাকা রূপান্তরিত কাণ্ড থেকে উদ্ভূত ধাবকের মাধ্যমে, যাকে আমরা বলি কচুর লতি। মূল গাছের গোড়া থেকে এ চারাগাছগুলো জন্মায়।
আগেই বলা হয়েছে কচুর গুণপনার কোনো শেষ নেই। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে শ্বেতসার,
আমিষ, চিনি ও ভিটামিন বি ও সি। পাতার রস রক্তপাত বন্ধ করে। রস উত্তেজক এবং সামান্য
জোলাপের কাজও করে। বাতের ব্যথা, অর্শরোগ (পাইলস), শ্বাসকষ্ট, ডায়রিয়া, নানারকম চর্মরোগসহ
অনেক রোগে কচু বেশ কার্যকর ভূমিকা পালন করে।
কচু নিঃসন্দেহে সুস্বাদু সবজির অন্যতম। তবে এটি খেলে গলা ধরা বা গলা চুলকানি শুরু হতে পারে। তবে বিশেষ উপায়ে রান্না করলে এ ঝামেলাকে এড়ানো যায়। বাহারি উদ্ভিদ হিসেবে এটি বাগানে, বিশেষ করে পানি-বাগানে স্থান পাওয়ার যোগ্য। জলাশয়ের পাড়ে কচু থাকলে এর পাতার গুণেই দারুণ পরিবেশ তৈরি হবে নিশ্চিত। বাংলাসাহিত্য ও লোকাচারে কচুর ব্যবহার উল্লেখ্যযোগ্য। কাউকে উপহাস করার জন্য আমরা বাঙালিরা এ উদ্ভিদের নাম ধরি।
Comments
Post a Comment