লাল সোনাইল, Java cassia, Cassia javanica

আমাদের দেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠসুন্দর ফুলগাছের একটি লাল সোনাইল। এর ইংরেজি নাম Java cassia। বৈজ্ঞানিক নাম Cassia javanica। পরিবার Fabaceae। বাংলাদেশের চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রাম এবং সিলেটের পাহাড়ি বনে এর দেখা মিলবে। এ ছাড়া দক্ষিণ ও দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশেও একে দেখা যায়। রূপের ঐশ্বর্য আছে বলেই একে দেশবিদেশের বিভিন্ন উদ্যান, বাগান, উদ্ভিদউদ্যান ও রাস্তার পাশে লাগানো হয়ে থাকে। 

অনেকে একে Pink shower-ও বলে থাকেন। সোনালু বা সোনাইল নামে আমাদের আরেকটি অনুপম সুন্দর ফুলগাছের নাম অনুসরণ করে এর নাম লাল সোনাইল রাখা হয়েছে। এতে কারও কারও আপত্তি রয়েছে যদিও। একে তো এর রঙ লাল নয়, আবার সোনাইল মানেই তো হলুদ বা সোনারঙ, অতএব গোলাপিরঙা এ ফুলের নামে কী করে সোনাইল বা লাল রঙটি যুক্ত করা যায়, তার চেষ্টাই ছিল এ ফুলের নামকরণের প্রধান ভিত্তি । এ প্রসঙ্গে বলে দেয়া ভাল যে, এমন অনেক গাছ রয়েছে যেগুলো আমাদের নিজস্ব অথচ স্থানীয় নাম না থাকায় পরিচিতি পেয়েছে বিদেশি বা ইংরেজি নামে। যেমন ধরা যাক 'নেপাল ট্রাম্পেট ভাইন' গাছটির কথায়। আজ পর্যন্ত এর মতো আরো কয়েকটি দেশি গাছের নিজস্ব নামকরণ আমরা করতে পারিনি। তাই ইংরেজি বা ভিনদেশি নাম বাদ দিয়ে যদি বাংলায় কোনো নাম পাওয়া যায়, তা কিছুটা অন্যায্য হলেও দোষের কিছু থাকবে না বলে বোধ করি। উদ্ভিদজগতে, বিশেষত বাংলায় ফুলের রঙ একটু লালের দিকে গেলেই আমরা তাকে লাল বলতে ভালোবাসি বলেই হয়ত এর নাম লাল সোনাইল। আর সোনাইল ও লাল সোনাইল একই পরিবার ও একই গণের বলে এরকম নাম দোষের নয় মোটেও। গরমের শুরুতে পুরো গাছের চাঁদোয়া জুড়ে অঢেল গোলাপি ফুলের উচ্ছ্বাস যে-কারোরই মন মাতাবে নিঃসন্দেহে। আসলে এর সাদা-গোলাপি রঙে রয়েছে চোখজুড়ানো শান্তস্নিগ্ধ কোমল গুণ।

শীতের সময়টা বাদ দিলে অন্য সময় লাল সোনাইল আমাদের দৃষ্টিসুখ দেয় এর ছড়ানো ও লম্বা ডালপালার সৌন্দর্য দিয়ে। এর ডালপালা এমনই বিস্তৃত যে অধিকাংশ সময় তা মাটি পর্যন্ত ছুঁয়ে যায়। আর তার পাতার ভুবনমোহিনী রূপ এতই চমৎকার যে, বাগানে, বিশেষ করে বড়সড় বাগানে একে স্থান না দেওয়াটা রীতিমতো অন্যায়জাতীয় কাজ। গ্রীষ্মের ফুলের মধ্যে এর স্থান জারুল, সোনালু, কৃষ্ণচূড়া, কনকচূড়ার কাতারে। জারুলের বেগুনি, সোনালুর হলুদ, কৃষ্ণচূড়ার লাল-হলুদ আর কনকচূড়ার হলুদের সাথে সাথে এর গোলাপি ফুলের আভা বাগানকে দুর্ধর্ষ সুন্দর করে তুলবে নিশ্চিত। গ্রীষ্মে রাজধানীর সংসদ ভবনস্থ ক্রিসেন্ট লেকের ধারে গেলে এ চতুষ্টয়ের রূপমাধুরী সবাই উপভোগ করতে পারবে। 

লাল সোনাইল গাছটি আকারে খুব একটা বড় হয় না, ১২-১৬ মিটারের মতো উচ্চতা পায়। এর ধূসর রঙের কাণ্ড খাটো। কচি ডাল সাদাটে, চকচকে। এটি পত্রমোচী, অর্থাৎ শীতে পাতা ঝরায়। এ সময়টাতে সে একেবারে ন্যাড়া হয়ে যায়, শুধুমাত্র লম্বাটে ফলগুলো গাছে ঝুলতে থাকে। তবে গরমের শুরুতে কচি পাতা ও তার কোলে ফুটন্ত ফুলরাশির আগমনে তার এ শ্রীহীন দশা একেবারেই ঘুচে যায়।  

লাল সোনাইলের পাতা যৌগিক, অর্থাৎ পত্রাক্ষে আরেকটি পত্রাক্ষ থাকে, যেখানে পাতাগুলো সজ্জিত থাকে। অণু পত্রাক্ষে পাতা থাকে ১২-১৪টি। একক পাতা ডিম্বাকার-আয়তাকার, ২.৫-৪.৫ সেমি লম্বা ও ২-৩.৫ সেমি চওড়া। 

এর ফুলগুলো সুগন্ধি। রঙ সাদা ও গোলাপির মিশেলে, কিছুটা লালটেও বটে। ফুল চওড়া ২ সেমি। ফুলগুলো ধরে কোরিম্ব পুষ্পবিন্যাসে, অর্থাৎ মূল পুষ্পদণ্ডের দুদিকে অনু পুষ্পদণ্ডগুলো অসমভাবে বা একটার পর একটা করে বিন্যস্ত। ফুলের পাপড়ি ও বৃতি, দুয়েরই সংখ্যা ৫। মার্চ-এপ্রিলে ফুল ধরে। তবে বর্ষার মাঝামাঝি পর্যন্ত অল্পবিস্তর ফুটতে থাকে। 

ফল বেশ লম্বা, ৩০-৬০ সেমি লম্বা ও ২-২.৫ সেমি চওড়া। শুঁটিগুলো দেখতে অনেকটাই সোনালুর ফলের মতো। শীতে পরিপক্ব ফলগুলোকে প্রায় ন্যাড়া ও বিবর্ণ পাতার সাথে ঝুলতে দেখা যায়। গাছটি বীজের মাধ্যমে বংশ বৃদ্ধি করে। 

আয়ুর্বেদশাস্ত্রে গাছটিকে ডায়বেটিসে ব্যবহার করা হয় বলে উল্লেখ রয়েছে। তা ছাড়া কোষ্ঠকাঠিন্য ও মূত্রনালীর বিভিন্ন রোগেও এর ব্যবহার রয়েছে। 

Comments

Popular posts from this blog

আকনাদি : পাতাগুলি যেন কথা

ঢাকার প্রাকৃত বৃক্ষ শাল

রসুন, Garlic, Allium sativum