উলু, Cogon grass, Imperata cylindrica
উলু (ইংরেজি নাম: Cogon grass, বৈজ্ঞানিক নাম: Imperata cylindrica, পরিবার: Gramineae) বাংলাদেশের অন্যতম সুন্দর ফুলদায়ী একটি ঘাস। এটি ১ মিটারের বেশি উচ্চতা পায় না। এর কাণ্ড নলাকার, নিরেট এবং তা খসখসে। এর শিকড় আনুভূমিকভাবে মাটির নিচে বিছানো থাকে। ঔষধিটি (ওষুধসংক্রান্ত নয়, বরং উদ্ভিদতাত্ত্বিক পরিচয়) জলাভূমির আশেপাশে কিংবা সিক্ত মাটিতে জন্মাতে ভালবাসে। এটি দেশের প্রায় সবখানেই পাওয়া যায়। এর আদিনিবাস আমাদের ভারতীয় উপমহাদেশ।
অন্যান্য নাম : উলুঘাস, উলুখড়, লালং, শন, ছন, ছাউ, সারকান্দা।
উলুর পাতা সবুজ, লম্বাটে, সাধারণত ঘাসের পাতা যেমনটি হয়ে থাকে। লম্বায় প্রায় ২০-৫০ সেমি, অগ্রভাগ চোখা।
ফুলগুলো গুচ্ছাকার, ধবধবে সাদা, রুপালি সাদাও বলা যায়। তবে বলে রাখা ভালো,
ফুলের প্রাথমিক রঙটি কিন্তু বেগুনে সাদা, পরে তা শুভ্র রঙ ধারণ করে। ফুলের মৌসুম শুরু
হয় গ্রীষ্মের শেষ থেকে। অনবরত ফুল ফোটায় শরৎকাল পর্যন্ত। এর ফুলের সৌন্দর্য়ের একমাত্র
উপমা হতে পারে কাশফুল; যদিও আকার-আয়তনে এর চেয়ে যথেষ্ট বড়, যেমন গাছ, তেমনি এর ফুলের
আকারও। ব্যাপারটা মজা করে বলা যায়, শরতে উলুঘাসের বিলয় ঘটার পর তারই শুভ্র আসনে বসে
কাশফুল!
উলু সাধারণত বিরাট জায়গা দখল করে জন্মাতে ভালবাসে। এ-কারণে যখন ফুলের মৌসুম আসে তখন এক দারুণ সুন্দর দৃশ্য সূচিত হয়। সবুজের পটভূমিতে ফোটা অসংখ্য সাদা ফুলের উচ্ছ্বাস দেখে যে-কারোরই ভালো লাগবে, নিশ্চিত বিশ্বাস।
উলুর ঔষধি-গুণের শেষ নেই। এর ছালের ক্বাথ মূত্রকারক ও শক্তিবর্ধক। গাছটি গনোরিয়া ও ডায়বেটিসে ব্যবহৃত হয়। তৃষ্ণা মেটাতে ও মায়েদের বুকের দুধ বাড়াতেও এটি ব্যবহৃত হয়। গবাদি পশু এ ঘাসটি খেতে না চাইলেও এর ব্যবহারিক মূল্য কম নয়। গ্রামেগঞ্জে ঘর ছাওয়ার কাজে এটি বেশ কাজে লাগে। কাগজও তৈরি করা যায়। এর খড় থেকে অনেক দেশে মদও তৈরি হয়। উলুবনে মুক্তা ছড়ানো--বৃথা চেষ্টা কথাটি বোঝাতে এ প্রবাদটি বাংলাসাহিত্যে দীর্ঘদিন ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
Comments
Post a Comment